বাংলার প্রতিচ্ছবি : গত বছরের আকস্মিক বন্যায় ডুবে ছিল নোয়াখালী। সেই বন্যার রেশ এখনও কাটেনি। এরই মধ্যে প্রবল বৃষ্টিপাত ও জোয়ারের পানি জেলাটির বাসিন্দাদের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপের ফলে ভারি বৃষ্টিপাত ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ারের পানিতে ডুবে গেছে উপকূলের নিম্নাঞ্চল।
জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নোয়াখালীতে ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা চলতি বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুক্রবার সকালে জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপের কারণে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।’
এদিকে, অতিরিক্তি জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর, চরহাজারী ও চরএলাহী ইউনিয়ন এবং হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন প্লাবিত এলাকার বাসিন্দারা।
দ্বীপ উপজেলা হাতিয়াসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। নদ-নদীর পানিও বৃদ্ধি পেয়েছে। জোয়ারের তোড়ে কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার কয়েকটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরবাড়ির পাশাপাশি ডুবেছে অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর। ডুবে গেছে ধান, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসলি জমিও।
হাতিয়ার মেঘনা নদীতে প্রায় চার কোটি টাকার মালামালসহ এমভি প্রাহিম নামে একটি পণ্যবাহী ট্রলার ডুবে গেছে।
হাতিয়ার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করেছে নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ ও জাতীয় উদ্যানের হরিণ। উপজেলার চরইশ্বর, নলচিরা, ঢালচর, সুখচর, চরঘাসিয়াসহ বিভিন্ন চরের সড়ক ও বাড়িঘরে জোয়ারের পানি উঠতে শুরু করেছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষ আতঙ্কিত অবস্থায় দিন পার করছেন।
নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের বাসিন্দা মোমিন বাবলু বলেন, ‘শুক্রবার সকাল থেকেও ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ঝড়ো বাতাস ও সাগর উত্তাল থাকায় তৃতীয় দিনের মত হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। নিঝুমদ্বীপের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ব্যাপক প্লাবিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারের নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের প্রধান সড়ক গুলো প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে নিচু অঞ্চলের বাড়িগুলোতে।’
অপরদিকে, টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে শহরের হাউজিং এলাকা, ফ্ল্যাট রোড, শিল্পকলা একাডেমির পাশের সড়ক, হাকিম কোয়ার্টার সড়ক। এছাড়া সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমদ বলেন, ‘বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলায় আমাদের সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। জানমালের নিরাপত্তা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসন, রেডক্রিসেন্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।’