বাংলার প্রতিচ্ছবি : যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ঋণমান কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে বিশ্বের মুদ্রাবাজারে। আজ সোমবার সকালে এশিয়ার বাজারে লেনদেন শুরুর পরই ডলারের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ছেদ পড়েছে। এর আগে টানা চার সপ্তাহ ডলার শক্তিশালী হয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে অস্থায়ী বাণিজ্য সমঝোতার কারণে বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা কিছুটা প্রশমিত হয়েছিল। ফলে প্রধান মুদ্রাগুলোর বিপরীতে ডলারের বিনিময়হার শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তবে সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি ব্যয় বাড়ছে আর সে কারণে ভোক্তাদের আস্থা কমছে।
এই প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার ঋণমান যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান মুডিস যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ঋণমান এক ধাপ নামিয়ে আনে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট ঋণ ৩৬ ট্রিলিয়ন বা ৩৬ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। এই ঋণের চাপ নিয়েই আশঙ্কা জানিয়েছে মুডিস। এর আগে আরও দুটি আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের ঋণমান কমিয়েছে।
আজ সকালে এশিয়ার বাজারে ইয়েনের বিপরীতে ডলারের মান কমেছে শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ; প্রতি ডলারে এখন পাওয়া যাচ্ছে ১৪৫ দশমিক ২২ ইয়েনে। সুইস ফ্রাঁর বিপরীতেও ডলারের মান পড়েছে শূন্য দশমিক ২ শতাংশ।
অন্যদিকে টানা তিন দিন দরপতনের পর অস্ট্রেলীয় ডলারের মান বেড়েছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ। বাজার–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন, অস্ট্রেলিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামীকাল মঙ্গলবার নীতি সুদহার শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ কমাতে পারে, বর্তমানে যা ৪ দশমিক ১০ শতাংশ।
ইউরোপের মুদ্রা ইউরোর দরও বেড়েছে। আজ সকালে ইউরোর দর শূন্য দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে এখন ১ দশমিক ১১ ডলার। অন্যদিকে ব্রিটিশ পাউন্ড শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৩২ ডলার। নিউজিল্যান্ডের কিউই ডলারও শূন্য দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৯ সেন্ট।
অস্ট্রেলিয়ার এএনজেড ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা গবেষণা বিভাগের প্রধান মাহজাবীন জামান বলেন, মার্কিন অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ এবং প্রশাসনের নীতিগত অবস্থানের কারণে বিনিয়োগ ও লেনদেনের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে ডলারের অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
গতকাল রোববার একাধিক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানান, যেসব বাণিজ্য অংশীদার দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘সদ্বিশ্বাসে’ আলোচনার টেবিলে বসবে না, তাদের পণ্যে গত মাসে যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করা হয়েছিল, শেষমেশ সেই হারেই শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
এদিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে পাইকারি হারে করছাড়ের বিল পাসের চেষ্টা করছেন, রিপাবলিকান দলীয় সংসদ সদস্যরাই তার বিরোধিতা করছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঋণ তিন থেকে পাঁচ ট্রিলিয়ন বা তিন লাখ কোটি ডলার থেকে পাঁচ লাখ কোটি ডলার পর্যন্ত বাড়তে পারে। সেটা হলে ডলারের দরে চাপ পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।