ঢাকা | ২২ জুন ২০২৫ ইং | বঙ্গাব্দ

ঢাকায় ইইউভুক্ত দেশের ভিসা সেন্টার খোলার অনুরোধ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

প্রকাশের তারিখ: এপ্রিল ২২, ২০২৫ ইং

ছবির ক্যাপশন:
ad728
বাংলার প্রতিচ্ছবি : ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত যেসব দেশের ভিসা ঢাকা থেকে ইস্যু করা হয় না, ইইউ রাষ্ট্রদূতকে সেসব দেশের জন্য ঢাকায় ভিসা সেন্টার খোলার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। 

উপদেষ্টার সঙ্গে সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ অনুরোধ জানান। বৈঠকে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা ইস্যু, অভিবাসন, মানব পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধ, বাংলাদেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

উপদেষ্টা বলেন, ইইউভুক্ত দেশগুলোয় বাংলাদেশ অন্যতম জনশক্তি রপ্তানিকারক দেশ। তাছাড়া ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পর্যটন, চিকিৎসাসহ নানা কাজে প্রচুর বাংলাদেশি লোকজন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় নিয়মিত যাতায়াত করেন। বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও জনসংখ্যা বিবেচনায় পৃথিবীর শীর্ষ দশটি দেশের মধ্যে অন্যতম। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে গিয়ে ইইউভুক্ত দেশের জন্য ভিসা সংগ্রহ সময়সাপেক্ষ, কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল। তাই ইইউভুক্ত দেশগুলোর জন্য ঢাকায় একটি ভিসা সেন্টার খোলা অত্যাবশ্যক। রাষ্ট্রদূত এ বিষয়ে ইইউভুক্ত দেশগুলোর সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে বলে জানান।

উপদেষ্টা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বৃহৎ অংশীদার ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ইইউ বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। 

বাংলাদেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে ইইউ সমর্থন করে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ চাইলে ইইউ প্রয়োজনীয় দক্ষতা, সামর্থ্য, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা দিয়ে এ প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করতে পারে। বাংলাদেশে এ বিষয়ে দক্ষ ও অভিজ্ঞ জনবলের ঘাটতি রয়েছে বিধায় উপদেষ্টা সংশ্লিষ্টদের জন্য ইইউভুক্ত দেশে এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজনের অনুরোধ করেন। 

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। ধীরে ধীরে আরও উন্নতি ঘটছে। 

এ সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, ইইউ বাংলাদেশের নিরাপত্তা সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। রাষ্ট্রদূত সংঘবদ্ধ মবসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক অপরাধ পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমছে। 

মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানো প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, যত বেশি সঠিক তথ্য জনগণকে সরবরাহ করা হবে, তত বেশি অপতথ্যের বিস্তার দূরীভূত হবে। 

এ বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের প্রতিবেশী একটি দেশ বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন গুজব ও মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। আমি আমাদের মিডিয়াকে সব সময় সঠিক তথ্য পরিবেশনের জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছি।

রোহিঙ্গা শরণার্থী বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, অফিশিয়ালি বাংলাদেশে এক দশমিক দুই মিলিয়ন রোহিঙ্গা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর চেয়েও বেশি শরণার্থী কক্সবাজারে বসবাস করছে, যা ওই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকিস্বরূপ। সেখানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে আমাদের বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংস্থাও রোহিঙ্গাদের সার্বিক জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে।

মানব পাচার ও চোরাচালান প্রতিরোধে ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায় উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশ ও মধ্যপ্রাচ্য থেকে প্রতিবছর প্রচুর বাংলাদেশি ইউরোপে অভিবাসনের উদ্দেশ্যে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেয়। দালাল ও মানব পাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং অনেকের প্রাণহানি ঘটে। 

তিনি বলেন, অবৈধ অভিবাসন ও মানব পাচার রোধে বাংলাদেশ, লিবিয়া ও ইইউর মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় ডায়ালগ আয়োজন ও পরে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হতে পারে। উপদেষ্টা এ বিষয়ে ইইউকে নেতৃত্ব প্রদান ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করে বলেন, বাংলাদেশ সার্বিক সহযোগিতা করবে। 
কমেন্ট বক্স