বাংলার প্রতিচ্ছবি : রাজধানী ঢাকার গাবতলীতে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বীজ উৎপাদন খামারের প্রায় তিন বিঘা জমি বেদখল হয়ে গেছে। আন্তজেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে এই জমি দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রথমে দখল করা হয় এক বিঘা জমি। এক মাসের ব্যবধানে এখন দখল করা জমির পরিমাণ বেড়ে হয়েছে তিন বিঘা। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। যত সময় যাবে, জমি দখলের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন বিএডিসির কর্মকর্তারা।
বিএডিসি বলছে, যে জমি দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড করা হয়েছে, তার অবস্থান গাবতলীর মাজার রোডের বীজ উৎপাদন খামারের ভেতরে। এই জমি পাঁচ বছরের জন্য মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষকে মালামাল রাখার জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের জুনে ইজারার মেয়াদ শেষ হয়। তবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে জমিটি বিএডিসিকে হস্তান্তর করেনি। এর মধ্যেই তিন বিঘা জমি বেদখল হয়ে গেছে।
বিএডিসির কর্মকর্তারা বলেন, আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে গত ২৩ মার্চ সরকারি দেয়াল ভেঙে এক বিঘা জমি দখল করা হয়। ওই সময় বিএডিসির পক্ষ থেকে দারুস সালাম থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়। শুরুতে থানা-পুলিশ জমি দখলমুক্ত করার বিষয়ে আগ্রহী ছিল; কিন্তু পরে থানা-পুলিশ এ বিষয়ে বিএডিসিকে কোনো সহায়তা করেনি। এ কারণে আন্তজেলা ট্রাকশ্রমিক ইউনিয়নের ব্যানারে খামারের আরও বেশি জমি দখলের চেষ্টা করা হচ্ছে। ১৬ এপ্রিল কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শনে দেখেন, এখন প্রায় তিন বিঘা জমি বেদখল হয়ে গেছে। বিষয়টি বিএডিসির চেয়ারম্যানকেও লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
সরেজমিন গত রোববার বীজ উৎপাদন খামারে দেখা যায়, মেট্রোরেল কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের মূল গেটের পশ্চিম পাশে মসজিদসংলগ্ন সরকারি দেয়াল ভেঙে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। ওই রাস্তা দিয়েই দখল করা জমির ভেতরে সারি সারি ট্রাক রাখা হয়েছে। ভেতরে কয়েকজন পরিবহনশ্রমিককে দেখা গেছে। তাঁরা বলছেন, এই জমি কোনো কাজে লাগছে না। তাই এখানে মিনি ট্রাক রাখা হয়েছে।
মিরপুর বীজ উৎপাদন খামারের (গাবতলী) জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক কামরুল হাসান খান বলেন, কিছু লোক খামারের জমি দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহার করছেন। সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা যায়, শুরুতে যে পরিমাণ জমি দখল করা হয়েছিল, পরে আরও বেশি জমি দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড সম্প্রসারণ করা হয়েছে। পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিষয়টি জানানো হয়েছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি।
দেয়াল ভেঙে সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমি দখল করার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক বলে জানিয়েছেন বিএডিসির একাধিক কর্মকর্তা। তাঁরা বলেন, ২৩ মার্চ যখন সরকারি প্রতিষ্ঠানের দেয়াল ভেঙে জমি দখল করা হয়, তখন পুলিশকে জানানো হয়েছে। পরে থানায় লিখিতভাবে জানিয়ে সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে। শুরুতে পুলিশ খুবই গুরুত্ব দিয়েছিল। পরে থানায় পরিবহননেতাদের সঙ্গে পুলিশ বৈঠক করে। ওই বৈঠকের পর পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। তারা আর সরকারি জমি দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তবে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিব-উল-হোসেন বলেন, জমি দখল করার বিষয়ে থানায় করা জিডির তদন্ত চলছে। দখলের বিষয়টি অধর্তব্য অপরাধ। এ কারণে দখলদারদের উচ্ছেদ করতে বিএডিসিকে আদালতের অনুমতি নিতে বলা হয়েছে। অনুমতি পেলে পুলিশ সহায়তা করবে। এখন যাঁদের দখলে আছে, তাঁদের পুলিশ এভাবে সরিয়ে দিতে পারে না।
বিএডিসির কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানের শতকোটি টাকার জমি দখল করে ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরকে জানানো হয়েছে। তবে এই দখলের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।