বাংলার প্রতিচ্ছবি : জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বিশ্বব্যাপী ‘ইসলামবিদ্বেষের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি, তিনি অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দমনে কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার (১৫ মার্চ) আন্তর্জাতিক ইসলামবিদ্বেষ প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে এক ভিডিও বার্তায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ বলছে, ইসরাইলের ১৭ মাসব্যাপী গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসলামবিদ্বেষ, আরব-বিরোধী মনোভাব এবং ইহুদিবিদ্বেষ বেড়ে গেছে।
গুতেরেস বলেন, ‘আমরা ইসলামবিদ্বেষের উদ্বেগজনক উত্থান প্রত্যক্ষ করছি। এটি বর্ণগত প্রোফাইলিং এবং বৈষম্যমূলক নীতিগুলোর মাধ্যমে মানবাধিকার ও মর্যাদাকে লঙ্ঘন করছে, যা ব্যক্তি ও উপাসনালয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি সহিংসতায় পরিণত হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি অসহিষ্ণুতা, চরমপন্থি মতাদর্শ এবং ধর্মীয় গোষ্ঠী ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর ওপর আক্রমণের একটি বৃহত্তর সমস্যা।’
তিনি নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম না উল্লেখ করে সরকারগুলোর প্রতি সামাজিক সংহতি জোরদার এবং ধর্মীয় স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানান।
গুতেরেস বলেন, ‘অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে অবশ্যই বিদ্বেষমূলক বক্তব্য ও হয়রানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, আমাদের সবাইকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, বিদেশি বিদ্বেষ (জেনোফোবিয়া) এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।’
এদিকে, জাতিসংঘের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মিগুয়েল অ্যাঞ্জেল মোরাতিনোস বলেন, ‘মুসলিমরা বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক বৈষম্য এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার শিকার হচ্ছেন।’
তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেন, ‘এই বৈষম্য মুসলিমদের প্রতি সামাজিক কলঙ্ক ও অযৌক্তিক জাতিগত প্রোফাইলিংয়ের মাধ্যমে প্রকাশ পায়, যা পক্ষপাতদুষ্ট গণমাধ্যমের উপস্থাপনা এবং কিছু রাজনৈতিক নেতার ইসলামবিদ্বেষী বক্তব্য ও নীতির মাধ্যমে আরও শক্তিশালী হয়।’
বহু বছর ধরে মানবাধিকার কর্মীরা এই বৈষম্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। তাদের মতে, কিছু লোক মুসলিম ও আরব সম্প্রদায়কে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করার চেষ্টা করে, যা সম্পূর্ণ অন্যায়।
বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক জায়গায় ফিলিস্তিনপন্থী কর্মীরা অভিযোগ করছেন যে, ফিলিস্তিনের পক্ষে তাদের অবস্থানকে ভুলভাবে হামাসের প্রতি সমর্থন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতসহ একাধিক দেশে ইসলামবিদ্বেষী হামলা ও বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করেছে।
মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস মঙ্গলবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত বছরে মুসলিম ও আরব-বিরোধী ৮,৬৫৮টি অভিযোগ রেকর্ড করা হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৭.৪ শতাংশ বেশি। সংস্থাটির ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালে তথ্য সংগ্রহ শুরুর পর থেকে এটি সর্বোচ্চ সংখ্যা।