প্রিন্ট এর তারিখঃ Jun 21, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ May 14, 2025 ইং
সু্ন্দরবনের বিএসএফের রেখে যাওয়া ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর, কারাগারে ৩ জন

মেহেদী হাসান মারুফ (সাতক্ষীরা প্রতিনিধি) : পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের মান্দারবাড়িয়া টহল ফাঁড়ি এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) রেখে যাওয়া ৭৮ জন নাগরিকদের মধ্যে ৭৫ জনকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর কর হয়েছে। এবং ৩ জনের বাংলাদেশী বৈধ কাগজ পত্র না থাকায় অবৈধ ভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের দায়ে মামলা দিয়ে সোমবার কারাগারে প্রেরন করা হয়।
মামলার আসামীরা হলেন, খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার ফুলবাড়িয়া গ্রামের খালিদ শেখের ছেলে আব্দুর রহমান (২০), নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের মুন্না শাহ এর ছেলে হাসান শাহ (২০) ও একই গ্রামের সোহেল শেখ এর ছেলে সাইফুল শেখ (১৯)। এদের বাবা-মা বাংলাদেশী হলেও তাদের জন্ম ভারতের গুজরাট প্রদেশের আহমেদাবাদ জেলার যথাক্রমে নেহেরীনগর, জোপারপাচ্চি ও ফুলবাড়িয়ায়।
উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ১ জনের ঢাকা, ৬৭ জনের নড়াইল, ৬ জনের খুলনা, ২ জনের যশোর, ১ জনের বরিশাল ও ১ জনের সাতক্ষীরা জেলায় বাড়ি। তাদের অধিকাংশই দুই মাস থেকে ৩৭ বছর ধরে বিভিন্ন মেয়াদে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আমেদাবাদ ও সুরাট শহরে বসবাস করতো বলে জানাযায়।
মঙ্গলবার শ্যামনগর থানা চত্ত্বরে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন এবিষয়ে এক প্রেসব্রিফিং করেন। প্রেসব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান। এসময় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম, কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার, শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ুন কবির মোল্লা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। পরে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের উপস্থিতিতে শ্যামনগর থানা থেকে তাদেরকে হস্তান্তর করা হয়।
পুশইন করা বক্তিরা বলেন, কাজের তাগিদে তারা গুজরাটের আহমেদাবাদ শহরের সুরাট বস্তি বসবাস করতো। ভারতীয় বৈধ কাগজ পত্র না থাকায় এবং বাংলাদেশি নাগরিক নিশ্চিত হওয়ায় তাদেরকে উচ্ছেদ করে সুন্দরবনের নদীর চরে রেখে যায় বিএসএফ। সকলেই শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলেও জানান তারা।
প্রেসব্রিফিংয়ে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আবরার হাসান বলেন, সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জোরপূর্বক পুশ ইন করা ৭৫ জন বাংলাদেশি এবং ৩ জন ভারতীয়কে উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড। তিনি বলেন, গত ৯ মে শুক্রবার ভোররাতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া চরে ৭৫ জন বাংলাদেশি এবং ৩ জন ভারতীয়কে জোরপূর্বক পুশ ইন করা হয়। তাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন যাবৎ ভারতের গুজরাট রাজ্যে বসবাস করে আসছিল এবং বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
এবিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রনী খাতুন জানান, বিএসএফ ও ভারতীয় কোস্টগার্ড গত ৯ মে ৭৮ বাংলাভাষী নাগরিককে চোখ বেঁধে বঙ্গপোসাগরের তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকা একটি চরে ছেড়ে দিয়ে যায়। সেখান থেকে উদ্ধারের পর রাতে কোস্টগার্ডের কাছ থেকে আমরা শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ তাদেরকে রিসিভ করি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ১২ মে সোমবার সকালে তাদেরকে আত্মীয় স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করার কথা ছিল। কিন্তু কাগজপত্র সঠিকভাবে প্রস্তুত না হওয়ায় তাদেরকে সোমবার হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। রাতে পুলিশ ও আমরা উপজেলা প্রশসন মিলে তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দেওয়ার পাশপাশি থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করি।
তিনি আরো বলেন, ৭৮ জনের মধ্যে ৭৫ জন জন্মসূত্রে বাংলাদেশী নাগরিক হওয়ায় মঙ্গলবার তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি তিন জনের ভারতীয় নাগরিকত্ব আছে কিন্তু বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। তিন জন ভারতীয় হিসাবে তাদের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। তাদের সঠিক কাগজপত্র আছে কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করে পুলিশ ব্যবস্থা নিবে। তবে ওই তিনজনই পৈত্রিক সূত্রে বাংলাদেশী বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম জানান, উদ্ধার হওয়া ৭৮ জনের মধ্যে আব্দুর রহমান, মো. হাসান শাহ ও সাইফুল শেখ তিনজন জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক দাবি করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সোমবার আদালতের মাধ্যমে তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রকাশক : ফারুক শিকদার
সম্পাদক : হিল্লোল বাউলিয়া
অফিস : যোগাযোগ: ৩০৫, জহর টাওয়ার, এলিফ্যান্ট রোড,নিউমার্কেট, ঢাকা-১২০৫
ইমেইল : banglarproticchobi@gmail.com
মোবাইল : ০১৬৩৩৬০৭২৫৫, ০১৮৪৮- ১২৭৩৯২
© সকল কিছুর স্বত্বাধিকারঃ বাংলার প্রতিচ্ছবি